প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আল্লাহ রাব্বুল আলাামীন যুগে যুগে তাঁর নবী-রাসুল ও দ্বীনের দা’য়ীগণকে সে এলাকায়ই প্রেরণ করেছেন যেখানে শিক্ষা-সভ্যতার অভাব ছিল বেশী। সে এলাকায় দ্বীনের দায়ীর মাধ্যমে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে শিক্ষার আলোয় সমাজকে আলোকিত করা হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার তিমিরপুর গ্রামটিও শিক্ষাদীক্ষার সুযোগ বঞ্চিত একটা জনপদ ছিল বলে নবীগঞ্জের সচেতন মহল সাক্ষ্য দেন।
অত্র এলাকার প্রায় বিশটি গ্রামে একটি দাখিল মাদরাসাও নেই, এমনকি বক্তারপুর আবুল খায়ের উ”চ বিদ্যালয় ছাড়া আর কোন উ”চ বিদ্যালয়ও নেই। মানসম্মত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উ”চ বিদ্যালয়ের অভাবে অত্র এলাকার নতুন প্রজন্ম শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে অজ্ঞতার অমানিশায় যখন হাবুডুবু খা”িছল তখন পূর্বতিমিরপুরের বিদ্যোৎসাহী, জনাব মো: আলাউদ্দীন (কমিশনার) সাহেব আক্কাছ আলী, আজিজুর রহমান ও নাসির আহমদ চৌধুরীকে সাথে নিয়ে অত্র মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।
আর্থিক সীমাবদ্ধতাসহ নানাবিধ বাঁধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে এলাকার কতিপয় নিবেদিত প্রাণ মানুষকে সাথে নিয়ে দানবীর লন্ডনী আনোয়ার মিয়া সাহেবের দানকৃত ০.৫০ একর এবং আলাউদ্দীন কমিশনার, আইয়ূব উল্লাহ ও আব্দুল মতলিব ভ্রাতৃত্রয়ে দানকৃত ০.১০ একর সহ মোট ০.৬০ একর জমির উপর ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারি অত্র মাদরাসার যাত্রা শুরু হয়।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সুপার ছিলেন মাও: আব্দুর রহীম। তার নেতৃত্বে একঝাঁক উদ্যোমী শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাদরাসাটি অতি অল্প দিনেই এলাকায় সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছিল। তিন বছরের মাথায় আর্থিক সংকটের কারণে মাদরাসার অগ্রগতি ¯’বির হতে থাকলে জনাব আলাউদ্দিন কমিশনার তাঁরই সাবেক ছাত্র মাও: এফ.কে.এম শাহজাহানকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানালে তিনি ২০০৪ সালে মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেন।
অত:পর মাও: এফ কে এম শাহজাহান নবীগঞ্জ ইসলামী শিক্ষা সোসাইটিকে অত্র মাদরাসা পরিচালনায় সম্পৃক্ত করেন। মাদরাসার আর্থিক প্রয়োজন পূরণে হবিগঞ্জ জেলার ইংল্যান্ড প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত ‘হবিগঞ্জ জেলা ডেভেলপমেন্ট ট্রাষ্ট ইউকে’ কে প্রতিষ্টানের দায়িত্বে অন্তভ’ক্ত করেন। মাদরাসা পরিচালনায় নবীগঞ্জ ইসলামিক শিক্ষা সোসাইটি ও হবিগঞ্জ জেলা ডেভেলপমেন্ট ট্রাষ্ট ইউকে সম্পৃক্ত হওয়ার পর সুপারের দায়িত্ব প্রদান করা হয় জনাব মাও: মুশাহীদ আলীকে। অত:পর ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জনাব লুৎফুর রহমান সহ-সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৫ সালের জুন মাসে মো: লুৎফুর রহমানের উপর সুপারের দায়্ত্বি অর্পন করা হয়। মাদরাসাটি ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এবং ২০১১ থেকে অদ্যাবধি জনাব মো: আলাউদ্দিন (কাউন্সিলর) সভাপতি হিসেবে পরিচালনা করছেন। মাঝে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন মাওলানা এফ কে এম শাহজাহান। ২০০৫ সালে হবিগঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ট্রাষ্ট ইউকে’র আর্থিক সহযোগিতায় নবীগঞ্জ ইসলামী শিক্ষা সোসাইটির নামে মাদরাসার জন্য ০.৪৪ একর জমি ক্রয় করা হয়। জমির বিক্রেতা জনাব মকসুদ আলী আরো .০৮ একর জমি মাদরাসার নামে দান করে দেন।
এরপর থেকে নবীগঞ্জ ইসলামী শিক্ষা সোসাইটি, মাদরাসা পরিচালনা কমিটি, হবিগঞ্জ জেলা ডেভেলপমেন্ট ট্রাষ্ট ইউকে, আসহাবে বদরীনের সদস্যগণ, দাতা সদস্যগণ, এলাকাবাসী, বিশেষ করে মরহুম কাজী আবু মিয়া ও আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী (বা”চু মিয়া)সহ মাদরাসার দেশী বিদেশী শুভাকাঙ্খীগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায় মাদরাসা দ্রুত উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়। ২০০৮ সালে মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক মাদরাসাটি ৯ম শ্রেণীতে পাঠদানের অনুমতি লাভ করে। ২০১৭ সালে দাখিল স্তরে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। আলিম শ্রেণি ও দাখিল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করার অনুমতির জন্য বোর্ডে আবেদন করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যব¯’াপনায় হিফজ বিভাগ চালু করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ফাজিল (ডিগ্রী) শ্রেণি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পূর্ব তিমিরপুরের মরহুম কাজী আবু মিয়া সাহেব ২০০৬ সালে একটি একাডেমিক ভবন, ২০০৯ সালে মসজিদের দোতলায় হিফজ বিভাগের ভবন নির্মাণ করে দেন । পাইকপাড়া নিবাসী, ইংল্যান্ড প্রবাসী আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী (বা”চু মিয়া) সাহেবের অর্থায়নে চমৎকার একটি মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদের বারান্দার অংশটুকু আনোয়ার মিয়া লন্ডনী সাহেব এবং হাজী নওশা মিয়া সাহেবের অর্থায়নে নির্মিত হয়। ২০১৩ সালে আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী, নবীগঞ্জের মাধবপুর-গালিমপুর গ্রামের আবুল মনসুর চৌধুরী এবং টুনাকান্দি গ্রামের জনাব আব্দুল মতিন সাহেবের সহযোগিতায় বালিকা শাখায় তিন তলা ফাউন্ডেশনে সাত কক্ষ বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন (আ্ংশিক) নির্মান করা হয়। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড প্রবাসী আফজাল মিয়া সাহেবের সহযোগিতায় দ্বিতীয় তলায় টিনশেড নির্মান করা হয়। সকলের সহযোগিতায় মাদরাসার নামে তিন দফায় আরো ০.২৯ একর জমি ক্রয় করা হয়।
মাদরাসার উন্নয়নে দেশী ও প্রবাসী ভাই-বোনদের বহুমূখী সহযোগিতা অব্যাহত আছে। যারা প্রাথমিক পর্যায়ে এককালীন সর্বনি¤œ ১০ হাজার টাকা দান করেন তাদের নাম দাতা বোর্ডে লিপিবদ্ধ করা হয়। অনেকেই নিজ উদ্যোগে মাদরাসার বিভিন্ন ¯’াপনা নির্মাণ করে দেন। যারা প্রতি রমজান মাসে কমপক্ষে ০১ হাজার টাকা দান করেন তাদেরকে “আসহাবে বদরীন” এর অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এছাড়া দেশী ও প্রবাসী অনেকেই আছেন যারা মাদরাসার উন্নয়নে ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি অন্যান্য দাতাগণ থেকে মাদরাসার জন্য ফান্ড কালেকশান করেন। হবিগঞ্জ জেলা ডেভেলপমেন্ট ট্রাষ্ট ইউ.কে’র সাথে সংশ্লিষ্ট ভাইয়েরা সারা বছর বিভিন্ন প্রয়োজনে মাদরাসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন, বিশেষ করে প্রতি বছর রজমান মাসে সাধারণ তহবিল ও দরিদ্র তহবিলের জন্য বিভিন্ন মসজিদে তহবিল সংগ্রহ করেন। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও নবীগঞ্জ ইসলামিক শিক্ষা সোসাইটির দায়িত্বশীলবৃন্দ মাদরাসার তহবিল সংগ্রহে আন্তরিক ভুমিকা পালন করেন। মাদরাসার দরিদ্র তহবিলে প্রতি বছর অনেকেই নিজেদের যাকাত, ছদকা, ফিতরা প্রদান করে থাকেন।
মাদরাসার বর্তমান অব¯’া : মাদরাসায় মোট জমির পরিমান ১.৪১ একর, তিনটি একাডেমিক ভবন ও একটি জামে মসজিদ আছে। ১ম শ্রেণী হতে আলিম শ্রেণী পর্র্যন্ত পাঠদান করা হ”েছ। ৬ষ্ঠ শ্রেণী হতে ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক ক্যাম্পাসে পৃথক সেকশনে পাঠদান করা হ”েছ। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা মোট ৩৩ জন। শিক্ষার্থী মোট ৮৪৫ জন। মাদরাসার সুশৃংখল একাডেমিক কার্যক্রম এবং পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ধারাবাহিক শতভাগ অর্জন, সর্বো”চ সংখ্যক বৃত্তিলাভ এবং সিলেট বিভাগের শীর্ষ ২০ এ ২য় ¯’ান অর্জনসহ নজরকাড়া ফলাফলের কারণে মাদরাসার সুনাম-সুখ্যাতি নবীগঞ্জের গন্ডি পেরিয়ে জেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মাদরাসার নানাধরণের সীমাবদ্ধতা আছে।
মাদরাসার ভবিষ্যত পরিকল্পনা : একটি মানসম্মত পূর্ণাঙ্গ কামিল মাদরাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা । যাতে বিজ্ঞান বিভাগ, কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, পৃথক ছাত্র ও ছাত্রী হিফজ বিভাগ এবং বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক ছাত্রাবাস থাকবে। সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে মাদরাসাটি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে ইনশাল্লাহ।